Total Visitor
Website counter
Counting since March 26, 2008

Success Story of Member

Client Image

শাখার নাম : বন্দরটিলা শাখা, চট্টগ্রাম
কোড নং : ২৭
ফুটপাত থেকে বিপনী বিতান , দিন বদলের বিশ্বস্ত সঙ্গী ডিএমসিবি


আমি মোহাম্মদ মাসুদ। জীবনের শুরুটা ছিল অনিশ্চয়তা আর দুঃসময়ে মোড়ানো। অল্প বয়সে বাবাকে হারিয়ে দিশেহারা শৈশব কেটেছে চরম দারিদ্রতায়। দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের সংস্থান ছিল না। উল্টো কিশোর বয়সেই কাঁধে উঠল সংসারের বোঝা। একদিকে সংসারে মা, ভাই-বোন আর অন্যদিকে নিজের কিশোর মন। জীবন কি বুঝে উঠার আগেই হারিয়ে ফেললাম দিশা। ২০০২ সালে জীবনের অথৈ সাগরে পড়ে খাবি খেতে খেতে একদিন এসে হাজির হলাম চট্টগ্রাম শহরে। আলো ঝলমল চকচকে শহরে তখনও ছিল অজস্র মানুষের ভীড়। ইপিজেড এলাকায় সকাল-বিকাল লাখো মানুষ জড়ো হয় নিজেদের ভাগ্য গড়তে। কি করব ভেবে পাই না। কারণ একে তো কিশোর তার উপর আমার নেই কোনো কাজের অভিজ্ঞতা। ফুটপাতেই কাটে রাত-দিন। ক্ষুধার জ্বালা টের পাই নিয়মিত। আর মনে পড়ে বাড়িতে মা-বোনদেরও। তারপর একদিন ইপিজেডের প্রধান ফটকের সামনে এক ভ্যান গাড়িতে চাকরি নেই। কোনো বেতন নেই। দু’বেলা পেট ভরে ভাত খেতে পাওয়ার নিশ্চয়তায় যোগ দেই কাজে। কারণ এতো দিনে এই নিষ্ঠুর শহরে বুঝে গেছি ক্ষুধার জ্বালা কত ভয়ংকর। ক্ষুধা থেকে মুক্তি পাওয়ার লোভেই নেমে পড়ি কাজে। ফুটপাতে হকারের অধীনে ভ্যানে কাজ নিলেও আমাকে করতে হতো অনেক কাজ। ভোরে ঘুম থেকে উঠে মালিকের বাসার বাজার করতে যেতে হতো। বাজার শেষ করলেই জুটতো সকালের নাস্তা। তারপর ভ্যানে করে সারাদিন পণ্য বিক্রি। মাঝখানে অল্প সময় জুটতো দুপুরের খাবারের জন্য। রাত দশটা অবধি বেচা-কেনার পর বাসায় গেলেও নিস্তার ছিল না। মালিকের ছোট বাচ্চা দেখাশুনা, কাপড়ের সুতো কাটা আরও কত কি! ছোট্ট মন আর ছোট্ট শরীরে এই ধকল নিয়েছি দুইবেলা খাবারের জন্য। অন্যদিকে বাড়িতে রেখে আসা মা-ভাই-বোনদেরও খুব মনে পড়তো । মায়ের আঁচলের গন্ধটাও টের পেতাম গভীর রাতে। কিন্তু চোখের জলেই ঘুমঘুম চোখে মাকে মনে করতাম। মা, গ্রামে থাকা অভুক্ত মা। আর ছোট ভাই-বোন। দিশেহারা আমি মায়ের দুঃখী মুখ মনে করে প্রতিজ্ঞা করি, মায়ের চোখের জল একদিন মুছে দেব ইন-শা-আল্লাহ।

এভাবেই বছর খানেক কাটে। তারপর একদিন অন্য ভ্যানে চাকরি নেই আমি। এবার কিছুটা বেতন জোটে। কিছুটা আশ্বস্ত হই। কারণ এবার যে বাড়িতে টাকা পাঠানো যাবে। দোকানে কাজ করতে করতে আমার মনেও এবার স্বপ্ন উঁকি দিতে থাকে। পুরোনো স্বপ্ন। মায়ের চোখের পানি মুছে দেওয়ার স্বপ্ন, সুখের স্বপ্ন, ভালো থাকার স্বপ্ন। কাজ করতে করতেই বছর ঘুরে। আমার বেতন বাড়ে। কারণ কাজের প্রতি নিষ্ঠা আর ভালোবাসা আমাকে দায়িত্ববান করে তোলে, যা মালিকের জন্যও ভালো। এরই মাঝে কিশোরকাল পেরিয়ে ক্রমশঃ যুবক হয়ে উঠি। বিয়ে হয়। পরিবারের খরচ যোগাতে স্ত্রীকেও কাজ করতে হয় গার্মেন্টসে।

তারপর ২০১৬ সালে জীবনের সমস্ত অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে ঘুরে দাঁড়াতে চাই। কিন্তু অভিজ্ঞতা তো ব্যবসার মূল পুঁজি নয়। মূলধন হিসেবে টাকারও দরকার। ভাবনায় পড়ে যাই। ভাবনার সিঁড়ি বেয়ে হুট করে একদিন মনে পড়ে একটি প্রতিষ্ঠানের নাম, “দি ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেড” (ডিএমসিবি)। আমার তখনকার মালিক এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সদস্য ও বিনিয়োগ গ্রহীতা। মালিকের হয়ে মাঝে মাঝে আমিও অর্থ লেনদেন করেছি। কিন্তু আবার ভাবনায় পড়ে যাই। কোন গ্যারান্টিতে আমাকে টাকা দিবে প্রতিষ্ঠানটি। আমার কাছে তো বন্ধক রাখার মতো কিছুই নেই। তারপরও একদিন এক বুক আশা নিয়ে সাহস করে ডিএমসিবি’র সিনিয়র বিনিয়োগ কর্মকর্তা আলমগীর ভাইকে বলে ফেলি নিজের পরিকল্পনার কথা। নিজেই ভ্যান দিতে চাই। নিজেই শুরু করতে চাই ব্যবসা, টাকা দরকার। বিস্তারিত শুনে আশ্বস্থ করেন আলমগীর ভাই। আমার চোখ ছলছল করে। স্বপ্নে বিভোর আমি নতুন দিনের আশা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি। প্রথম বার ডিএমসিবি থেকে ১ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ পাই। সাথে নিজের জমানো ৪০ হাজার। নেমে পড়ি ফুটপাতে কাপড় বিক্রির ব্যবসায়।

এরপরের গল্প পিছনে ফিরে না তাকাবার। এরপরের গল্প ডিএমসিবি’র হাত ধরে এগিয়ে যাবার। ছোট্ট আমি এগিয়ে যাই ডিএমসিবি’র সার্বক্ষণিক সহযোহিতায়। ভ্যান গাড়ি ছেড়ে একদিন দোকান দেই। তখনও পাশে থাকে ডিএমসিবি। এখন আর কোন কিছুতেই ভয় নেই আমার। নিজের অভিজ্ঞতা-পরিশ্রম আর সাথে আছে ডিএমসিবি। যে আমি একদিন ইপিজেডের ফুটপাতে ঘুমিয়েছিলাম আশ্রয়হীন, আমি এখন ইপিজেড এলাকাতেই নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তদারকি করি। এখন দুইটি দোকানের মালিক আমি। এরমধ্যে একটি বিলাসবহুল বিপনী বিতানে। স্বপ্নের হাত ধরে এগুতে থাকা আমি ডিএমসিবি থেকে ইতোমধ্যে ৮ বার বিনিয়োগ নিয়েছি। সর্বশেষ আমার চলমান বিনিয়োগটি ১০ লক্ষ টাকার। একদিন অন্যের বাসায়, অন্যের অনুগ্রহে থাকা আমি এখন ১০ হাজার টাকা ঘর ভাড়া দেই। আমার অধীনে কাজ করছে ৩ জন সহকারী। প্রিয়তমা স্ত্রীকে আর চাকরি করতে হয় না। সুখের সংসারে সন্তান এসেছে। আগের কষ্টের দিন বদলে এখন সুখের ছড়াছড়ি। একদা যারা আমাকে দেখে হাসি-ঠাট্টা করত তারাই এখন বাহবা দেয়। আর বাড়িতে মায়ের চোখে-মুখেও এখন সুখের ছোঁয়া। পুরোনো ভাঙ্গা ঘর এখন সেমি পাকা হয়েছে। বিয়ে দিয়েছি ছোট বোনের। ভাইও পড়াশুনা করছে নিশ্চিন্তে। আর সামনের দিনগুলোতে নিজের ব্যবসাকে আরও বিস্তৃত করতে চাই। থামতে চাই না কোনো ভাবেই। থেমে থাকা মানে জীবনের অপচয় হিসেবেই ধরে নিয়েছি।

নিজের সব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এগুতে চাই অনেক পথ। এই পথ পাড়ি দিতে আর ভয় নেই। কারণ আমি জানি সাথে আছে আমার আস্থার প্রতিষ্ঠান ডিএমসিবি। যত বারই কোন সমস্যায় পড়েছি, বিশেষ করে আর্থিক সমস্যা তৈরি হয়েছে-তখনই নির্ভরতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি। ঝামেলা ছাড়া স্বল্প সময়ে যখনই বিনিয়োগ চেয়েছি ৩/৪ দিনের মধ্যেই তা পেয়েছি। তাই এখন কোন বড় কাজেই আর্থিক দিক নিয়ে ভাবনা নেই আমার। আর ডিএমসিবি’র বন্দরটিলা শাখার ব্যবস্থাপক ও অন্যান্য কর্মীদের আন্তরিক প্রচেষ্টাই আমাকে সফলতার পথে এনেছে বলে আমি মনে করি। সুন্দরের পথে তাই যে যাত্রায় শামিল হয়েছি, সেই পথের অনন্য কারিগর হিসেবে দেশের অন্যতম এই প্রতিষ্ঠান ডিএমসিবি’র প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। অনাগত দিনেও ডিএমসিবিকে পাশে পাওয়ার প্রত্যাশা করি। এগিয়ে যাওয়ার পথে এই প্রতিষ্ঠানের উপরই সম্পূর্ণ নির্ভর থেকেছি, থাকবো। ইন-শা-আল্লাহ। জয়তু ডিএমসিবি।