Total Visitor
Website counter
Counting since March 26, 2008

Success Story of Member

Client Image

শাখার নাম : মানিকগঞ্জ শাখা
কোড নং : ১৯
ডিএমসিবি'র সহায়তায় মোটর মেকানিক বাসুদেব সরকার মোটর পার্টসের বড় ব্যবসায়ী


মোটর মেকানিক বাসুদেব সরকার মোটর পার্টসের বড় ব্যবসায়ী। এক সময় তিনি একটি মোটর গ্যারেজে কাজ শিখে টানা ৩০ বছর বিভিন্ন গ্যারেজে মেকানিকের কাজ করেছেন। কিন্তু প্রবল ইচ্ছা আর ঐকান্তিক চেষ্টায় এখন তিনি সফল ব্যবসায়ী হয়েছেন। জীবন-সংগ্রামে বিজয়ী এই মানুষটির সাথে আলাপকালে জানা গেল তাঁর সফলতার পেছনের গল্প। আর্থিক সংকটের কারণে লেখাপড়ার সুযোগ বঞ্চিত এই ব্যক্তি তার মেধা ও চেষ্টার ফলে সব দুঃখ কষ্টকে জয় করেছেন। নিজের সফলতা অর্জনের পাশাপাশি গোটা পরিবারকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। তিনি জানান, তার এই প্রতিষ্ঠার পেছনে বিশেষ ভূমিক রেখেছে "দি ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেড" (ডিএমসিবি) এর মানিকগঞ্জ শাখা।

বাসুদেব সরকারের বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলা শহরের পশ্চিম দাশড়া এলাকায়। তিনি জানান তাঁর জীবনের অতীত এবং সফলতার কথা। বাবা মহাদেব সরকার পান, খয়ের ও সুপারির ব্যবসা করতেন। তিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। বাবা, মা, ৪ বোন ২ ভাইয়ের বড় সংসার। বাবার একার আয়ে পরিবারের নানা চাহিদা পূরণের পর লেখাপড়ার খরচ চালানো কষ্ট হয়ে পড়ে। এছাড়া বড় দু’বোনের বিয়ে দিতে গিয়ে আরো চাপে পড়েন তিনি। মানিকগঞ্জ মডেল হাই স্কুলে দশম শ্রেণীতে পড়ার সময় ছোট ভাই ও ছোট দুই বোনের কথা চিন্তা করে তিনি মানিকগঞ্জ জেলা শহরের কালীবাড়ি এলাকায় পারিল হোন্ডা হাসপাতাল নামের একটি মোটর সাইকেলের ওয়ার্কসপে কাজ নেন। সেখানে ৪ বছর কাজ শেখার পর মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন পেট্রোল পাম্প এলাকায় ‘সুব্রত অটো সার্ভিস’ নামে নিজেই একটি মোটর সাইকেল মেরামতের গ্যারেজ দেন। ২০০১ সালে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পরের বছর ২০০২ সালে তিনি মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন জয়রা রোডে 'মানিকগঞ্জ পার্টস সেন্টার' নামে মোটর সাইকেলের স্পেয়ার পার্টস এর একটি দোকান দেন। কিন্তু দোকানে পর্যাপ্ত মালামাল না থাকায় পার্টসের দোকানে বেঁচা বিক্রয় খুব একটা ভাল হচ্ছিল না। আর্থিক অবস্থা তেমন ভাল না থাকায় দোকানে মালামাল উঠাতে পারছিলেন না। তিনি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু কোথাও সহজ শর্তে ঋণ পাচ্ছিলেন না । পরে তার এক ভাইয়ের পরামর্শে ২০০৯ সালের জুন মাসে তিনি যোগাযোগ করেন ডিএমসিবি’র মানিকগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপকের সাথে।

ব্যাংকের শর্ত অনুযায়ী, ট্রেড লাইসেন্স, স্থায়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংকের সাথে চুক্তিপত্র সম্পন্ন করার পর তিনি ব্যাংকের বাই-মুরাবাহা-ক্ষুদ্র বিনিয়োগ প্রকল্পের আওতা থেকে ১ লক্ষ টাকার বিনিয়োগ নেন। এই টাকা দিয়ে তিনি তার দোকানে জাপান, চীন ও ভারতীয় মোটর সাইকেলের স্পেয়ার পার্টস উঠান। এরপরে তাঁর দোকানে বিক্রি বাড়তে থাকে। নির্ধারিত সাড়ে চার মাসে তিনি ব্যাংকের বিনিয়োগ পরিশোধ করেন। এরপর তিনি আবার সেখান থেকে বিনিয়োগ নেন এবং শর্ত অনুযায়ী তিনি সময়মত বিনিয়োগের টাকা পরিশোধ করেন। এভাবে তিনি ডিএমসিবি হতে এখন পর্যন্ত মোট ২২ বার বিনিয়োগ নিয়েছেন। সর্বশেষ তিনি গত বছরের নভেম্বরে ডিএমসিবি হতে ৪ লক্ষ টাকার বিনিয়োগ নিয়েছেন। এখন তার দোকানে পর্যাপ্ত স্পেয়ার পার্টসসহ অন্যান্য মালামাল আছে। এই দোকান থেকে যে কোন ব্যক্তি তার চাহিদা মাফিক মোটর সাইকেলের যন্ত্রাংশ সুলভ মূল্যে ক্রয় করতে পরেন। তিনি জানান, প্রতিদিন তার গড় বিক্রয় হয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যবসা করতে গেলে অনেক টাকা লাগে। বাধ্য হয়েই তিনি ব্যাংক থেকে বিনিয়োগ নিয়েছেন। বিনিয়োগ ছাড়া শুধুমাত্র নিজের পুঁজিতে কেউ ব্যবসা করতে পারে না। বিনিয়োগ নিয়ে যদি সময়মত তা পরিশোধ করা যায় তাহলে সবাই সফল হতে পারেন। তিনি বলেন, তিনি প্রতিদিন লাভের অংশ থেকে ব্যাংকের বিনিয়োগ কিস্তির টাকা সরিয়ে রাখেন এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ে ডিএমসিবি'র কর্মকর্তা এসে তাঁর নিকট থেকে উক্ত কিস্তির টাকা নিয়ে যান। এ কারণে কিস্তির টাকা দেওয়া নিয়ে তিনি কখনও সমস্যায় পড়েন নি। এই ব্যবসার মাধ্যমে তিনি তার ছোট ভাইকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাকেও একটি স্পেয়ার পার্টস এর দোকান করে দিয়েছেন। ছোট ভাইও এখন প্রতিষ্ঠিত।

বাসুদেব সরকারের এই উত্থানের পেছনে যিনি আড়াল থেকে উৎসাহ দিয়েছেন তিনি হলেন তার স্ত্রী ভারতী সরকার। একজন ব্যবসা করছেন আর একজন সংসারের হাল ধরে রেখেছেন। তাদের দুই মেয়ের বড়টি ঘিওর সরকারী কলেজে অর্থনীতিতে অনার্স পড়ছেন, আর ছোট মেয়ে মানিকগঞ্জ এসকে সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ছে। তাদের ইচ্ছা দুই মেয়েকে উচ্চ শিক্ষিত করবেন। কারণ তিনি নিজের জীবনে পড়াশোনা করতে পারেনি অর্থাভাবে। তাই তিনি সবসময় তাঁর মেয়েদের নিয়ে চিন্তা করেন এবং চেষ্টা করেন যেন কোন ভাবেই তাদের শিক্ষা জীবন ব্যহত না হয়। বাসুদেব সরকার ও তার স্ত্রী ভারতী সরকার দম্পতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ডিএমসিবি কর্তৃপক্ষের প্রতি। বিশেষ করে মানিকগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমসহ এই শাখায় কর্মরত অন্যান্য কর্মকর্তাদের প্রতি। তাঁরা বলেন, তাঁরা যদি ঐ সময় সহজ শর্তে বিনিয়োগ না পেতেন, তাহলে হয়তো এই সফলতার মুখ দেখতে পারতেন না। নিজেদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে লেখাপড়া করাতে পারতেন না। ব্যবসা করে যে সামাজিক মর্যাদা অর্জন করেছেন তাও হয়তো পেতেন না। তিনি যুব সমাজকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হতাশার গ্রাস থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কোন কাজকে অবহেলা না করে যার যা কাজের যোগ্য তা নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, সতার সাথে পরিশ্রম করলে সফল সে হবেই হবে।

বাসুদেব সরকারের এই সফলতায় দারুণ খুশী পারিল হোন্ডা হাসপাতাল গ্যারেজের মালিক আব্দুস সামাদ সুমন মিয়া। তিনিই তাঁকে মোটর মেকানিকের কাজ শিখিয়েছেন। তিনি বলেন, বাসুদেব সরকার এখন মানিকগঞ্জ জেলা শহরের অন্যতম বড় মোটর পার্টসের ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, বাসুদেব কাজ শেখার ব্যাপারে খুবই মনোযোগী ছিলেন। ডিএমসিবি’র মানিকগঞ্জ শাখার বর্তমান শাখা ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, বিনিয়োগ গ্রহীতা বাসুদেব সরকার ২০০৯ সাল থেকে নিয়মিত ডিএমসিবি থেকে বিনিয়োগ নিচ্ছেন। তিনি ব্যাংকের শর্ত অনুযায়ী প্রতিদিন বিনিয়োগের কিস্তি পরিশোধ করছেন। কিস্তি পরিশোধে তিনি কখনও বিলম্ব করেননি কিংবা কিস্তি পরিশোধে ব্যার্থ হননি। ব্যবস্থাপক আরো বলেন, মানিকগঞ্জ জেলা শহরে মোট ১৭টি মোটরসাইকেল পার্টসের দোকান আছে। এর মধ্যে বাসুদেব সরকারের ‘মানিকগঞ্জ পার্টস সেন্টার’ দোকানটি বড় তিনটি দোকানের একটি। তিনি অত্যন্ত সততা ও সুনামের সাথে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। বাসুদেব সরকারের মতন উদ্যোগতা হওয়ার জন্য তিনি বর্তমান প্রজন্মের যুব সমাজের প্রতি আহবান জানান।