Total Visitor
Website counter
Counting since March 26, 2008

Success Story of Member

Client Image

শাখার নাম : মহাখালী শাখা, ঢাকা
কোড নং : ১১
চলচিত্রের অন্ধকার জগৎ থেকে আলোর পথে সফল ব্যবসায়ী জামাল হোসেন


নাম করা চলচিত্র পরিচালক। যৌবনের ১৪ টি বছর দাঁপিয়ে বেড়িয়েছেন রঙিন ভূবনে। নিজের হাতেই তৈরি করেছেন প্রায় ৪০০ টিরও বেশি সিনেমা। যার বেশির ভাগই ছিল ব্যবসা সফল। এ সুবাদে দু’হাত ভরে কামিয়েছিলেন টাকা। কিন্তু অন্ধকার জগতের সেই টাকা তার কোনো কাজে আসেনি। যেমনি ভাবে কামিয়েছেন তেমনি ভাবেই উড়িয়েছেন। অবশেষে সেই অন্ধকার জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে আলোর পথ খুঁজতে থাকেন তিনি। পেয়েছেনও সুন্দর সে পথ। হয়েছেন একজন সফল ব্যবসায়ী। তার সফল ব্যবসায়ী হওয়ার পেছনে একজন ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানের অবদানের কথা এ জীবনে কোন দিন ভুলবেন না বলে তিনি জানান। তিনি তাঁর স্ত্রী হালিমা আক্তার সুমির অনুপ্রেরণাতেই অন্ধকার জগৎ ছেড়েছেন। আর প্রতিষ্ঠানটি হচ্ছে “দি ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেডে” (ডিএমসিবি)। যাদের আর্থিক সহায়তায় ব্যবসায় সফল হয়েছেন। এই ব্যাংকটির কারণেই তিনি আজ তাঁর মা, স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে নিয়ে সুখে শান্তিতে ঢাকা শহরে বসবাস করছেন। সফল এই ব্যবসায়ী হলেন সাবেক চলচিত্র পরিচালক মোঃ জামাল হোসেন বর্তমানে ব্যবসায়ী জামাল হোসেন। জামাল হোসেন ডিএমসিবি’র মহাখালী শাখার একজন সম্মানিত সদস্য, একই সঙ্গে একজন বিনিয়োগ গ্রহীতাও। তার সাথে সম্প্রতি এই প্রতিবেদকের কথা হয় তার নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘রাকিব ইরা টি স্টল’ এ বসে। দোকানের নাম টি স্টল হলেও চায়ের সাথে দোকানটিতে প্রায় শতাধিক পন্যের পসরা সাজিয়েছেন জামাল হোসেন দক্ষিন বাড্ডা এলাকার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে।

জামাল হোসেন, ১৯৭১ সালে মাদারীপুর জেলার আদমপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জন্ম বলেই তার জীবনটা সংগ্রামে ভরা। ৩২ বছর ধরে ঢাকাতে বসবাস করছেন। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ১৪ বছর গেছে চলচিত্র জগতে। ১৯৯৭ সালের প্রথমে ঢাকাতে আসেন। এলাকার এক পরিচিত জনের মাধ্যমে জাতীয় চলচিত্র জগতে প্রবেশ করেন। প্রথম ছয় মাস তিনি এক চলচিত্র পরিচালকের সহকারী হিসেবে কাজ করেন। পরে তিনি নিজেই পরিচালক হন। পরিচালক হিসেবে তিনি নিজেই প্রায় ৪০০টি পূর্ন্য- দৈর্ঘ্য ছায়াছবি রিলিজ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো- দেনমোহর, শেষ আঘাত, অংক, উল্টা-পাল্টা, ব্যাথার দান, শ্রমিক নেতা, স্যারেন্ডার, তুমি আমার, ভেজা চোখ, সহযাত্রী, তোমাকে চাই ইত্যাদি।

সিনেমা তৈরির মাধ্যমে তিনি প্রচুর টাকাও কামিয়েছেন। তবে তা তিনি ধরে রাখতে পারেননি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চলচিত্র জগতটাই একটা তামাশার জায়গা। তামাশা ছাড়া আর কিছুই এখানে টেকসই হয় না। যতদিন ওই দুনিয়াতে ছিলাম, বেশ আরাম-আয়েশে ছিলাম। পরকাল, মৃত্যু সম্পর্কে একেবারেই গাফেল ছিলাম। এদিকে ঢাকায় যাওয়ার কয়েক বছরের মধ্যে নিজের চাচাত বোনকে বিয়ে করি। সে ছিল লাজুক প্রকৃতির ও ধর্মভিরু একজন আদর্শবান নারী। বিয়ের পর থেকেই আমাকে সে নানা ভাবে চলচিত্র জগত থেকে ফেরানোর চেষ্টা করেন। মূলত তার সেই চেষ্টাতেই আমার মধ্যে পরকালের চিন্তা আসে। মৃত্যু আমাকে ভয় দেখিয়েছে। অবশেষে ২০১২/১৩ সালের দিকে এই জগত থেকে আমি ফিরতে সক্ষম হই। তিনি বলেন, রঙিন ওই জীবনে কি ছিল না। যখন যা চেয়েছি, তখন তাই পেয়েছি। এই জগতে ঢোকাটা অনেক সহজ কাজ কিন্তু বেরিয়ে আসাটা অনেক কঠিন। রঙিন এই জীবন থেকে ফিরতে আমাকে নিজের সঙ্গে অনেক যুদ্ধ করতে হয়েছে। অবশেষে আল্লাহর মেহেরবানীতে ফিরতে পেরেছি। আল্লাহকে শুকরিয়া।

তিনি বলেন, যখন এ বিষয়ে আমার হুশ হলো তখন আমার কাছে কোনো টাকা-পয়সা জামানো ছিল না। রঙিন দুনিয়াতে টাকা যেভাবে কামিয়েছি ঠিক একই ভাবে খরচ হয়েছে। এই জগতটা খুবই খারাপ। যেহেতু এই জগত ছাড়ার সময় আমার কাছে কোনো টাকা ছিল না সেহেতু ছেলে-মেয়ে স্ত্রী তাদের নিয়ে কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তিনি বলেন চলচিত্র জগতে কাজ করার সময় বিল্ডিং নির্মাণ খাতে সাব-কন্টাক্টার হিসেবে কাজও করতাম। যা এখনো চলছে। আশা আছে মরার আগ পর্যন্ত অন্যান্য কাজের পাশে এ কাজটিও চলমান থাকবে। এখান থেকে কিছু টাকা পেতাম, তা দিয়েই কোনোমতে চলতে লাগলো আমাদের সংসার। তবে ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ার খরচ, ঘর ভাড়াসহ সংসারের খরচ কোনো ভাবেই সামাল দিতে পারছিলাম না। তাই ঠিকাদারির পাশাপাশি ছোট-খাটো ব্যবসার চিন্তা মাথায় আসে। এই চিন্তা থেকেই দক্ষিণ বাড্ডায় বাসার পাশেই একটি মুদি দোকান ভাড়া নেই। নগদ টাকা না থাকায় অন্য এক আত্মীয়ের কাছ থেকে ধার করে স্বল্প পরিসরে ব্যবসা শুরু করি। আর সারাক্ষণ চিন্তা করি কোথাও থেকে কিছু টাকা পেলে ব্যবসাটাকে গতিশীল করতে পারবো। কিন্তু কে দেবে টাকা। দীর্ঘদিন ঢাকাতে থেকে অনন্ত এতোটুকু বুঝেছি যে, ঢাকা শহরে কেউ কারো না। আবার সবাই আমার। মানে যার আছে তার লোকের অভাব নেই। আর যার নেই তার কেউ নেই। এর মধ্যে আমার স্ত্রীর আমাকে পরামর্শ দিলো ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার জন্য। তার কথামতো পাশের একটি ব্যাংকে যাই ঠিকই কিন্তু কাজের কাজ কিছু হলো না। ব্যাংকটির নাম বলবো না, কিন্তু তাদের ব্যবহারটা আমার সারাজীবন মনে থাকবে। তারা আমাকে প্রথমে দেখে কোনো গুরুত্বই দিলো না। আর যখন শুনলো ঋণ নেবো, তখনতো আরও গুরুত্ব কমে গেলো আমার। পরে অফিসের ছোট এক কর্মকর্তা আমাকে জানালো ব্যাংক লোন নিতে গেলে একটা সিস্টেমের মধ্যে আসতে হয়, ঋণের বিপরীতে যে কোনা সম্পদ ব্যাংকে জামানত রাখতে হয়। অনেক পেপার সাবমিট করতে হয়। দুইজন জামিনদার লাগবে। যার কোনোটাই আমার ছিল না। অবশেষে হতাশ হয়ে বাসায় ফিরে আসি। মনে দারুন কষ্ট, কোথাও থেকে টাকা পাচ্ছিলাম না। এভাবে না খেয়ে, না নেয়ে দুঃখ-কষ্টে চলে গেলো দুই-তিন বছর। অপেক্ষায় থাকি বিধাতা আমাদের ভাগ্যে কি লিখে রেখেছেন। অবশেষে ২০১৭ সালে এলো বিধাতার পক্ষ থেকে সুসংবাদ। সেদিন সকালও না, আবার দুপুরও না, ঠিক মাঝামাঝি সময় দোকানে ক্রেতাও তেমন নেই। আনমনে বসে ছিলাম। হঠাৎ এক ভদ্রলোক, যার কাধে একটি ব্যাগ ছিল। দেখতেও মাশাল্লাহ। পোশাক-আশাকে ভদ্র লোক মনে হয়েছিল। কিন্তু সে সময় কে জানতো যে, তিনিই আমার আর্থিক মুক্তির দূত হিসেবে এসেছিলেন। সে সময় বুঝতে পারলে হয়তো তাকে অনেক আদর যতœ করতাম। যা হোক তিনি দোকানের কাছে এসে আমাকে দেখে একটা সালাম দিলেন। আমিও উত্তর দিলাম। এরপর তিনি আমার কাছে চা খেতে চাইলেন। ভালো করে চাও বানিয়ে দিলাম তাকে। চা খাওয়ার এক পর্যায়ে আমার ব্যবসার খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু করেন। আমিও অকপটে আমার সব কষ্টের কথা তাকে জানালাম।

সব কিছু শোনার পর তিনি আমাকে ডিএমসিবি’র কথা শোনালেন। ব্যাংকের কথা শোনা মাত্রই আমার আগের সেই স্মৃতির ভেসে উঠে। সাথে সাথে ওই লোকটিকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, ভাই ব্যাংকের কথা বাদে আর কোনো কথা থাকলে বলেন, না হয় বাদ দেন। তিনি আমার মোটিভ বুঝে আমাকে শান্ত করে বললেন, শোনেন সব ব্যাংক সমান না। ডিএমসিবি হলো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য খুবই ভালো একটি ব্যাংক। এই ব্যাংকটি সহজ শর্তে বিনিয়োগ দিয়ে থাকে। তাছাড়া তেমন কোনো কাগজপত্রও জমা দিতে হয় না। এধরনের আরো নানান কথা। প্রথমে আমি তার কথা বিশ্বাস করতে পারিনি। তবে বিশ্বাস করার ভান করলাম, কারণ টাকা আমার দরকার। তবে সত্যি বলতে কি সেই লোকটিই সেদিন প্রকৃত পক্ষে সত্য কথাই বলেছিলেন। যার বাস্তবের প্রমান আমি নিজে আজকের এই ব্যবসায়ী মোঃ জামাল হোসেন।

জামাল হোসেন আরো বলেন, ডিএমসিবি’র ঐ কর্মকর্তার নাম ছিল মাসুদ। তিনি আমাকে সবকিছু বুঝিয়ে বলার পর আমি ডিএমসিবি থেকে বিনিয়োগ নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করি। ঐ অফিসারের পরামর্শে আমি ডিএমসিবি’র মহাখালী শাখায় গিয়ে বিনিয়োগ গ্রহণের সব প্রক্রিয়া শেষ করি। সব কাজ মিটিয়ে ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর অনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাংকটি আমাকে প্রথম ৩০ হাজার টাকা বিনিয়োগ প্রদান করে। স্বামী-স্ত্রী দুই জন মিলে সেই টাকা দিয়ে নতুনভাবে ব্যবসা শুরু করি। এক্ষেত্রে আমার স্ত্রীর কথা কোনো দিনও ভুলবো না। কারণ সে বিপদে-আপদে সবসময় আমার পাশে একনিষ্ঠভাবে ছিল। শুধুমাত্র সংসার নয়, ব্যবসা ক্ষেত্রেও সে আমাকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা দিয়েছে। যা হোক ডিএমসিবি’র বিনিয়োগের সেই ৩০ হাজার টাকা দিয়ে ব্যবসায় সফলতা আসতে শুরু করে। এর চার মাসের মধ্যে আমি প্রথম বিনিয়েগের সকল কিস্তি পরিশোধ করে দ্বিতীয় বারের মতো বিনিয়োগ গ্রহণ করি। এবার ব্যাংক আমাকে ৫০ হাজার টাকার বিনিয়োগ দেয়। আবার চার মাসের মধ্যে আমি দ্বিতীয় বিনিয়েগের সকল কিস্তি পরিশোধ করে পুনরায় বিনিয়োগের কথা বললে এবার ৭০ হাজার টাকা বিনিয়োগ দেয়। সেই টাকা দিয়ে ব্যবসাকে সাজিয়ে-গুছিয়ে করার চেষ্টা করতে থাকি। এর অনেকদিন পর মনে হলো ব্যবসাটাকে আরও বড় করি। এই ব্যাংকের একটা বড় সুবিধা হলো এখান থেকে সহজে বিনিয়োগ পাওয়া যায়। তাই আবারও বিনিয়োগ আবেদন করলাম। আমার লেনদেন ভালো দেখে এবার বিনিয়োগের পরিমান বাড়িয়ে ১ লক্ষ টাকা করেছে ডিএমসিবি। ধন্যবাদ ডিএমসিবিকে। তাদের উপকার আমি কোনো দিনও ভুলবো না।

তিনি বলেন, বাড্ডা এলাকায় আমার মহল্লাতে ডিএমসিবি’র প্রথম গ্রাহক আমি। আমার দেখা-দেখি বা আমার মাধ্যমে এই এলাকার প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন ব্যবসায়ী বর্তমানে এই ব্যাংকের বিনিয়োগ সুবিধাভোগী। ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, মোঃ জামাল হোসেনের ওই এলাকাতে বর্তমানে ডিএমসিবি’র দেড় থেকে ২ কোটি টাকা বিনিয়োগ চলমান রয়েছে। সকল সদস্যের লেনদেন খুবই ভালো। জামাল হোসেন বলেন, ডিএমসিবিকে আমি আমার পরিবারের মতো মনে করি। এই ব্যাংকের সেবার কথা আমার সারা জীবন মনে থাকবে। আজ আমার পরিবার সুখি পরিবার। ছেলেটা এখন পড়া-লেখার পাশপাশি একটি চাকরিতে ঢুকেছে। তার নিজের খরচ এখন সে নিজেই চালাতে পারে। আর মেয়েটা এবার নবম শ্রেনীতে পড়ে। তার খরচ, দোকান ভাড়া, বাড়িভাড়া ও পরিবারের অন্যান্য খরচ মিটিয়ে খুব সুন্দর ভাবে চলছে আমাদের সুখী জীবন। এক্ষেত্রেও আল্লাহকে শুকরিয়া জানাই। সবশেষে তিনি বলেন, ব্যবসা এখন যা আছে আল-হামদুলিল্লাহ। আস্তে আস্তে আরও বাড়াবো। তবে হঠাৎ করে বাড়িয়ে বিপদের সম্মুখীন হতে চাই না। যেহেতু ডিএমসিবি আমাদের সাথে সর্বদা আছেন, তাই এটা নিয়ে কোনো চিন্তা করি না।