Total Visitor
Website counter
Counting since March 26, 2008

Success Story of Member

Client Image

শাখার নাম : বরগুনা শাখা
কোড নং : ৭২
ডিএমসিবি'র সহায়তায় নাসির উদ্দিন এখন প্রতিষ্ঠিত বাবসায়ী


" দি ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেড " (ডিএমসিবি) এর সহযোগিতায় বরগুনার সহায় সম্বলহীন নাসির উদ্দিন একজন সফল ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে গড়ে ওঠার কাহিনী শুনুন নাসির উদ্দিনের নিকট থেকেই। আমি মোঃ নাসির উদ্দিন, বরগুনা জেলার বরগুনা সদর উপজেলার দক্ষিণ মনসাতলী গ্রামের হতদরিদ্র লোকমান মুসুল্লীর পুত্র। আমার দুই বোন ও আমাকে নিয়ে মোট ৫ সদস্যের সংসার ছিল আমাদের। বাবার আয় রোজগার এবং জমি জমা বলতে তেমন কিছুই ছিল না। পৈত্রিক সূত্রে সামান্য কিছু জমি ছিল আমার বাবার। বাড়ী বলতে ছিল ছোট একটি কাঠের ঘর। তাও বর্ষার দিনে টিনের চাল থেকে পানি পড়তো ঘরের মধ্যে। বাবার সামান্য আয়ে আমাদের তিন বেলা ঠিকমত খাবারই জুটতো না। ভাঙ্গা টিনের বদলে নতুন টিন কেনার সামর্থ্য আমার বাবার ছিল না। তাই বর্ষা কালে অতি কষ্টে দিন কাটত আমাদের। কিছুদিন পরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এক বান টিন বরাদ্দ হয় আমাদের জন্য। সরকারী রিলিফ পাওয়া টিনে বর্ষার পানি পড়া থেকে কোন প্রকার রক্ষা পাই আমরা। আমার বাবা বরগুনা বাজারে সাহাপট্টি নামক স্থানে মাসিক ৩ হাজার টাকায় ছোট্ট একটি দোকান ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন শস্যবীজ বিক্রি করতো। বাবার সামান্য আয় দিয়ে টানাপোড়নের সংসার ছিল আমাদের। বাবার ব্যবসা থেকে সামান্য যা লাভ হত তা দিয়ে কোন মতে চলত আমাদের সংসার। বাবা বরগুনা শহরে ব্যবসা করলেও আমরা থাকতাম একটু দূরে মনসাতলী গ্রামে।

আর্থিক অনটনের কারণে ৮ম শ্রেণীতেস্কুল জীবনের ইতি টানতে হয় আমাকে, কারণ বাবা নিয়মিত স্কুলের বেতন পরিশোধ করতে পারতেন না। তাছাড়া বাবার শাররীক অসুস্থতা দিন দিন জটিল আকার ধারণ করতেছিল। বাবার চিকিৎসার টাকা সংগ্রহ করতে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে লাগলাম। শেষ পর্যন্ত আমার দাদার রেখে যাওয়া শেষ সম্বল ২ বিঘা জমি বিক্রি করে বাবাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে গেলাম। সেখানে দীর্ঘ ৬ মাস বাবাকে চিকিৎসাধীন রাখতে হয়েছিল। বাবার দীর্ঘ চিকিৎসার ফলে জমি বিক্রির সব টাকা ফুরিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজনের নিকট থেকে ধার দেনা এবং সাহায্য গ্রহণ করে বাবাকে কিছুটা সুস্থ্য করে বাড়ী নিয়ে আসলাম। কিন্তু বাবা আর আগের মত দোকানে বসতে পারতেন না। এ দিকে দোকান দীর্ঘ ৬ মাস বন্ধ থাকায় ঘর মালিক দোকানের ভাড়া পরিশোধ করে দোকান ছাড়ার জন্য চাপ দিতে লাগলো। ঘরে অসুস্থ বাবা, বৃদ্ধা মা, ছোট দুইটি বোন। বাবার এক মাত্র ছেলে আমি। পরিবারে আয়ের কোন পথ নেই। জমানো টাকা যা ছিল সবটাই ইতিমধ্যে ফুরিয়ে গেছে। পাওনাদার বাসায় এসে প্রতিদিন টাকার জন্য তাগাদা দিত। দু’চোখে অন্ধকার দেখতে লাগলাম। জীবনটা বয়ে নেয়াই যেন ছিল রীতিমত যুদ্ধ।

বাবা তখন বাধ্য হয়ে কিছু জমি বর্গা নিয়ে শুরু করলেন কৃষি কাজ। খরা ও বর্ষা কাটিয়ে ওঠা জমিতেই চলত সেই চাষ। সংসারের অবস্থা তখন দারুন নাজুক হয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে আমি তখন কাজের খোঁজে বের হলাম এবং ভাবতে লাগলাম বাবার সেই পুরানো বীজের ব্যবসাটা আবার যদি শুরু করি কেমন হয়। কিন্তু পুঁজি না থাকায় সাহস পাচ্ছিলাম না। তাই প্রথমে বাজারে একটা মুদির দোকানে অল্প বেতনে চাকুরী নিলাম। এভাবে চললো আরো বছর দেড়েক।

এরপর সংসারে অভাবের সাথে যুদ্ধে টিকতে না পেরে বাধ্য হয়ে ভাল কিছু করার আশায় স্বপ্ন দেখতেছিলাম কিন্তু উপায় খুঁজে পাচ্ছিলাম না। সংসারে তখন চরম অভাব। বেতনের পুরো টাকাটাই বাড়িতে দিতাম। এভাবে কাটলো আরো ছয় মাস। এরপর ভাগ্য বদলানোর জন্য মনে মনে অনেক স¦প্নের জাল বুনতে লাগলাম। প্রায়ই ভাবতাম কিছু টাকার ব্যবস্থা হলে বাবার সেই বীজের দোকান পুনরায় চালু করতাম। কিন্তু কিভাবে; কারণ যে টাকা আয় করি তা সংসারে দেয়ার পর অবশিষ্ট কিছুই হাতে থাকেনা যা দিয়ে কিছু করতে পারবো। এরপর আমার এক বন্ধু আমাকে ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু ব্যাংক ঋণ পেলাম না। এরপর বাড়িতে গিয়ে বাবাকে সব খুলে বললাম, বাবাকে বললাম যে, আমি আবার আপনার বীজ ভান্ডারের ব্যবসাটা শুরু করতে চাই। বাবা শুনে খুশি হলেন এবং আমাদের বাড়িতে থাকা একটি মাত্র গরু বিক্রি করে আমার হাতে পুরো টাকাগুলো তুলে দিলেন। পুঁজি বলতে শুধু ঐ টাকাটাই। তা দিয়ে শুরু করলাম আমার নতুন ব্যবসা। আমি যেহেতু বাজারে দোকানে থাকতাম তাই বিভিন্ন কো¤পানীর সেলসম্যানদের সাথে আমার জানা পরিচয় ছিল। তাছাড়া বাবার কাছ থেকে ব্যবসা সংক্রান্ত সব কিছু শুনে নিয়েছিলাম। বিভিন্ন কো¤পানীর লোকজন আমাকে সহযোগিতা করতে লাগল। ‘বিসমিল্লাহ বীজ ভান্ডার’ নাম দিলাম দোকানের। আমার ব্যবসাও ধীরে ধীরে বড় হতে থাকল। কিন্তু যা আয় হতো তা দিয়ে দোকান ভাড়া, বাবা ও মায়ের ঔষধ, দুই বোনের লেখা ও পড়ার ব্যয় বহন করা দুষ্কর ছিল। তার উপরে বিভিন্ন পাওনাদারের তাগাদার কারণে আমার ব্যবসা নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। আমি বুঝতে পালাম যে, আমার ব্যবসায় যদি আরও কিছু পুঁজি বিনিয়োগ করা যেতো তাহলে ব্যবসায় দ্রুত উন্নতি করা সম্ভব হতো এবং আমি সকল দেনা পাওনা মিটিয়ে আমার স¦প্নের পথে এগিয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু বড় পুঁজি কিভাবে যোগাড় করব তা ভেবে পাচ্ছিলাম না। এমন সময় একদিন দোকানে একজন এসে সালাম বিনিময় করলেন এবং জানালেন যে তিনি ডিএমসিবি’র বরগুনা শাখার একজন বিনিয়োগ কর্মকর্তা। তিনি আরও জানালেন যে, দৈনিক বেঁচা কেনা আছে, যারা সৎ ও কর্মঠ এমন ক্ষুদ্র ও মাঝারী ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় ডিএমসিবি বিনিয়োগ প্রদান করে থাকে। কথাটি শুনে আমার খুব ভাল লাগলো কিন্তু মনে সাহস হচ্ছিল না। কারণ আমি জানি ঋণ নিতে হলে জামানত সহ অনেক কাগজ পত্রের প্রয়োজন হয়। তাই আমার দেওয়ার মতো কোন জামানত না থাকার কারণে আমি চুপচাপ শুনছিলাম। কিন্তু কথার শেষ পর্যায়ে তিনি বললেন ডিএমসিবি খুব কম সময়ে জামানত ছাড়াই সহজ শর্তে বিনিয়োগ দিয়ে থাকে। তখন আমি আগ্রহ করে বললাম স্যার, আমি কিভাবে বিনিয়োগ পেতে পারি? আমার কথা শুনে তিনি আমাকে সব বুঝিয়ে বললেন এবং বিস্তারিত জানতে চাইলে ডিএমসিবি’র বরগুনা শাখায় গিয়ে ব্যবস্থাপক স্যারের সাথে কথা বলতে বলেন।

পরের দিন অফিস চলাকালীন সময়ে আমি আমার বাজারের এক বন্ধুকে সাথে নিয়ে চলে গেলাম ডিএমসিবি’র এর বরগুনা শাখায়। শাখায় গিয়ে বাবস্থাপক স্যারের সাথে কথা বলে খুব ভাল লাগলো। আমি স্যারকে জানালাম আমার ব্যবসায়িক পরিকল্পনার কথা, সেই সাথে জানালাম বিনিয়োগ পাওয়ার ইচ্ছাও। সব শুনে স্যার আমাকে সদস্য হওয়ার জন্য বললেন। আমি স্যারের কথামতো ডিএমসিবি’র সদস্য হলাম। কয়েকদিন পর আমি সকল নিয়ম মেনে ২০১৫ সালে প্রথম বারের মতো ৩ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ গ্রহণ করলাম। উক্ত বিনিয়োগের পুরো টাকা দিয়ে আমি আমার পরিকল্পনা মতো ব্যবসার কাজে লাগালাম। এরপর থেকে আমাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। দোকানে বীজের পরিমান বেশি হওয়ার কারণে দোকানে অনেক নতুন গ্রাহক আসতে শুরু করলো। ফলে আমার বিক্রয় বাড়ার সাথে সাথে লাভ্যাংশের পরিমানও বাড়তে থাকলো। এরপর গল্পটা অনেকটা রূপকথার মতো। আমি এ পর্যন্ত একাধিকবার বিনিয়োগ নিয়েছি এবং সময়মত তা পরিশোধ করেছি। এখন পর্যন্ত আমি ডিএমসিবি থেকে মোট ৭ বার বিনিয়োগ গ্রহণ করেছি। বর্তমানে আমার ৭ লক্ষ টাকার বিনিয়োগ চলমান। বর্তমানে আমি প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার মূলধনের ব্যবসা পরিচালনা করছি।

আমার সম্পদ বেড়েছে। দুই বোনকে ভাল পাত্রে বিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি। আমি নিজেও বিয়ে করেছি। আমার স্ত্রী আমাকে দারুন ভাবে সহযোগিতা করে। আমি বর্তমানে দুইটি পুত্র সন্তানের জনক। আমার ছেলেদেরকে বর্তমানে বরগুনা শহরের ভাল স্কুলে পড়াশুনা করাচ্ছি। আমি আমার আয়ের অংশ থেকে টাকা জমিয়ে আমাদের বসত বাড়ীটি নতুন করে তৈরি করেছি। আমার বাবা ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইহজগৎ ত্যাগ করেছেন। আমি আমার বাবার নামে বড় ধরনের দোয়া অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেছি। বর্তমানে আমার দোকানটির পজিশন অনেক ভাল এবং দোকানের আয়তন প্রায় ৬০০ স্কায়ার ফিট, মাসিক ভাড়া ১০ হাজার টাকা। বর্তমানে আমার দোকানে ৫ জন কর্মচারী কর্মরত। আমার যেকোন আর্থিক প্রয়োজনে আমি ডিএমসিবি’র বিনিয়োগ কর্মকর্তাকে বলি। তিনি খুব কম সময়ে ও আন্তরিকতার সাথে আমাকে বিনিয়োগ পেতে সহযোগিতা করেন। তাছাড়া আমি বিভিন্ন সময় আমার ব্যবসায়িক সংকট কালে ডিএমসিবি’র বরগুনা শাখায় গিয়ে শাখা ব্যবস্থাপক স্যারের সাথে পরামর্শ করি। ডিএমসিবি’র সহায়তায় আমি এখন বরগুনা শহরে একজন সফল ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। ভবিষ্যতে আমার ইচ্ছা আছে ব্যবসাটা আরও বৃদ্ধি করে বীজ কো¤পানীতে পরিণত করার এবং সেই সাথে একটি বড় আকারে কোল্ড ষ্টোরেজ তৈরি করারও পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে আমি কয়েকটি বীজ কো¤পানীর সাথে ডিলার হিসাবে চুক্তিবদ্ধ রয়েছি। সর্বোপরি আমি ডিএমসিবি’র সেবায় অত্যন্ত সন্তুষ্ট।