Total Visitor
Website counter
Counting since March 26, 2008

Success Story of Member

Client Image

শাখার নাম : নাটোর শাখা
কোড নং : ৫৫
ডিএমসিবি আমার সাফল্যের অংশীদার


নাটোর শহরের ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা আলাইপুর। দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত নিত্যপণ্য, লোহা, স্টিল, কাঁচ, সিরামিক, কাগজ, হার্ডওয়ার কিসের দোকান নেই এখানে, আছে দরকারী সব কিছু। নাটোর বাসীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের সাথে সাথে চাহিদাও বেড়েছে বেশ কিছু অনিয়মিত পণ্য যার একটি স্যানিটারি সামগ্রী। এই স্যানিটারি সামগ্রীর একজন সফল ও স্বনামধন্য ব্যবসায়ী মহিউদ্দীন আহমেদ। তার দোকানের নাম ' নাশা স্যানিটারি '। এক যুগ ধরে তিনি " দি ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেড " (ডিএমসিবি) এর নাটোর শাখার একজন নিয়মিত সদস্য ও বিনিয়োগ গ্রহীতা। শুধু ডিএমসিবি’র বিনিয়োগকে পুঁজি করেই তিনি দাঁড় করিয়েছেন স্যানিটারি ব্যবসা। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে। সম্প্রতি ডিএমসিবি নাটোর শাখার প্রতিনিধি হিসেবে আমার গিয়েছিলাম তার প্রতিষ্ঠানে। একটু আলাপের পর বোঝা গেলো প্রতিষ্ঠানের পরিসর বৃদ্ধি আর ভবিষ্যত নিয়ে স্বপ্নবাজ স্বত্বাধিকারী মহিউদ্দীন আহমেদ চিন্তিত নন। ডিএমসিবি'র প্রতি মহিউদ্দীন আহমেদের কৃতজ্ঞতার যে শেষ নেই, তা বোঝা গেল প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিতে গিয়ে। যথেষ্ট সম্মানের সাথে সাদরে গ্রহণ করে নিজের অতীত আর বর্তমানের তুলনা করলেন রাখ-ঢাক ছাড়াই।

মহিউদ্দীন আহমেদ জানান, ১৯৭৪ সালে তার জন্ম শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার সখীপুরের ব্যপারীগঞ্জে। বাবা মতিউর রহমান একজন কৃষক ও মা রেজিয়া বেগম গৃহিনী। শরীয়তপুর নদীভাঙ্গন কবলিত এলাকা হিসেবেই পরিচিত। বেশি বৃষ্টিপাতে বন্যা হলে মাঠের ফসল কৃষকের ঘরে তুলতে পারতো না। তাই বাবা মতিউর রহমান সময়-অসময়ে কাজও করতেন অন্যের ক্ষেতে। এভাবেই ভাগ্য আর প্রকৃতি সহায় হলে ভালোভাবে অতিবাহিত হত দিন। তবে প্রাকৃতিক বৈরিতায় আর জীবনের তাগিদে ১৯৯৮ সালের জানুয়ারী মাসে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষে ঢাকায় পাড়ি জমান মহিউদ্দীন। নড়িয়ার প্রতিবেশি ভাই আবুল হাশেমের সহায়তায় কাজ নেন সূত্রাপুর নওয়াবপুর আলু বাজারের মনোয়ারা ট্রেডার্সে। ওই বছরের ২১শে ফেব্রুয়ারী মনোয়ারা ট্রেডার্সের মালিক নাসিরুল্লাহ ওয়ালিদ মহিউদ্দীন আহমেদকে দোকানের ম্যানেজারের দায়িত্ব দেন। সততা, পরিশ্রম আর ধৈর্যগুণে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ব্যবসার মোড় ঘুরিয়ে দেন মহিউদ্দীন। তার আচার ব্যবহারে মুগ্ধ কাস্টমাররা। অনিয়মিত গ্রাহকও নিয়মিত হতে থাকলো। বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলেন মালিক নাসিরুল্লাহ ওয়ালিদ। উত্তরের জেলা নাটোরে তার একটি স্যানিটারী সামগ্রীর দোকান ছিলো যা ছিলো অলাভজনক। ওই ব্যবসা দেখাশোনা করতেন তার শ্যালক। নাসিরুল্লাহ ওয়ালিদ ব্যবসা পুনরুজ্জীবিত করতে নাটোরের দোকানে পাঠালেন মহিউদ্দীনকে। ব্যবস্থাপক হিসেবে পরের এক দশক নাটোরের দোকানে কাটিয়ে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানটিকে জীবনদান করলেন মহিউদ্দীন। ততদিনে নাটোরে গড়ে উঠেছে আরো কয়েকটি স্যানিটারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

২০০৯ সালে মালিক নাসিরুল্লাহ ওয়ালিদ নাটোর থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে চাইলেন। প্রতিষ্ঠিত একটি ব্যবসা মালিকের হঠাৎ বিক্রির সিদ্ধান্তে মহিউদ্দীনকে চিন্তিত করেছিলো খুব। ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যে বেতন পেয়েছেন মহিউদ্দীন, তা থেকে কিছুই সঞ্চয় ছিলো না তার। চরম এই দুরবস্থায় হতাশ হয়ে বিদেশে পাড়ি জমানোর সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। বিদেশ যাবার টাকা যোগাতে যখন ঘনিষ্ঠজনদের সাথে যোগাযোগ শুরু করলেন, তখন মাহাবুবুল হক জুয়েল নামের এক ভাই পরামর্শ দিলেন বিদেশ যাওয়ার চিন্তা রেখে দেশেই কিছু করার। মহিউদ্দীন তখন জানান তার সঞ্চয়ে কিছু নেই যা দিয়ে তিনি নিজে কিছু করবেন। তখন মাহাবুবুল হক জুয়েল ডিএমসিবি সম্পর্কে বিস্তারিত বলেন মহিউদ্দীনকে। মহিউদ্দীন প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেননি এমন প্রতিষ্ঠান এদেশে আছে যারা কিনা স্বল্প সময়ে ও সহজ শর্তে বিনিয়োগ প্রদান করে। বিশ্বাস তৈরী হতে বেশি সময় লাগেনি যখন ডিএমসিবি’র নাটোর শাখার ব্যবস্থাপক সব কিছু জেনে পাশে দাঁড়াতে রাজি হয়। মহিউদ্দীন তখন মালিক নাসিরুল্লাহ ওয়ালিদকে অনুরোধ করেন দোকানটা অন্য কারো কাছে বিক্রি না করে তাকে দিতে। মালিক তার প্রতি স্নেহশীল ছিলেন। তাই আর দ্বিমত করেননি।

২০০৮ সালের শুরুতে প্রথমবারের মতো ডিএমসিবি থেকে ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ সহায়তা গ্রহণ করে সে টাকায় দোকান মালিককে দেন মহিউদ্দীন। এরপর আতœীয় স্বজনদের সহায়তায় বেশ কিছু টাকা নিয়ে কেনা শুরু করেন স্যানিটারি পণ্য। পরিচিত ব্যবসায়ী হওয়ায় অল্প দিনেই জমে উঠে মহিউদ্দীনের নিজ ব্যবসা যার নাম দেন ' নাশা স্যানিটারি '। প্রতিদিন কিস্তি টাকা নিতে আসতেন ডিএমসিবি’র প্রতিনিধিরা। এভাবেই নির্দিষ্ট সময়ে প্রথম বিনিয়োগ পরিশোধ করেন মহিউদ্দীন। এরপর ২০০৯ সালে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ গ্রহণ করেন এবং তা যথা সময়ে পরিশোধ করে পরের বছর ২০১০ সালে ৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ গ্রহণ করেন মহিউদ্দীন। এবার ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকায় একখন্ড জমি কেনেন। এভাবেই গত এক যুগে মহিউদ্দীন ডিএমসিবি থেকে মোট ১৭ বার বিনিয়োগ নেন।

মহিউদ্দীন আহমেদ বর্তমানে নাটোর শহরের আলাইপুরের একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি দুই সন্তানের জনক। বড় ছেলে নাটোর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্র ও মেয়ে নতুন কুঁড়ি একাডেমির ২য় শ্রেণির ছাত্রী। ব্যবসার মুনাফা থেকেই মাসিক ৫ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়াসহ সংসার পরিচালনার যাবতীয় খরচাদির সংস্থান করেন মহিউদ্দীন আহমেদ। শুধু তাই নয়, ব্যবসার মুনাফায় গঠিত সঞ্চয় থেকেই বছর তিনেক আগে ছোটভাই বোরহান উদ্দীনকে দুবাইতে পাঠিয়েছেন তিনি। বোরহান উদ্দীনও দুবাইতে এখন প্রতিষ্ঠিত টেইলার্সের মালিক। এছাড় নড়িয়ার বাড়িতে বড় ভাই মাইনুদ্দীনের পরিবারের সাথে বসবাস করেন মা রেজিয়া বেওয়া। নাটোরে নিজ সংসারের খরচাদি মেটানোর পরেও মা-ভাইয়ের জন্যেও কিছু ব্যয় করেন মহিউদ্দীন আহমেদ।

মহিউদ্দীন আহমেদের কাছে প্রশ্ন ছিলো, ব্যবসায়ী জীবনে কিসের অভাব তিনি অনুভব করেছেন যা এখনও করেন। সাবলীল ভাষার সরাসরি উত্তরে তিনি জানান অর্থের অভাব। মহিউদ্দীন বলেন, ‘প্রত্যেক মানুষের উঠে আসার পেছনে গল্প থাকে প্রচন্ড কষ্টের। আমারও প্রচন্ড মনোকষ্ট ছিল। আমার চিন্তা বা ভাবনার বিষয়বস্তুর অভাব ছিলো না কিন্ত সব চিন্তা দিনশেষে ফিকে হয়ে যেত যখনই মনে হত আমার কাছে টাকা নেই। '

' মানুষের টাকা থাকা সত্বেও উদ্যোগ, বাস্তবিক জ্ঞান আর ধৈর্যের অভাবে অনেকে ব্যবসায় দাঁড়াতে পারে না। সেদিক থেকে পুঁজি ছাড়া আমার অন্যকিছুর কমতি ছিলো না। উদ্যোগ ছিলো বলেই আমাকে যেমন পুঁজি দিয়েছিলো ডিএমসিবি; তেমনি বলবো ডিএমসিবি’র পুঁজি ছিলো বলেই আমার উদ্যোগ পূর্ণতা পায়। আমি ওই দিনগুলোর কথা ভুলতে পারি না; যখন নিরুপায় হয়ে বিদেশ যেতে মনস্থীর করেছিলাম। একদিকে স্ত্রী-সন্তান পরিবারের মায়া আমায় বারবার থমকে দিচ্ছিলো তেমনি জীবিকার প্রয়োজন আমাকে গভীরভাবে তাড়িত করছিলো। সে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ডিএমসিবি। আমি সহজ শর্তে বিনিয়োগ নিয়ে ব্যবসায় খাটানো শুরু করি। মুনাফা থেকে দিনে দিনে বিনিয়োগও শোধ করেছি, নিজেও চলেছি। এভাবেই বেঁচে থাকার অবলম্বন আমার জীবিকাকে পোক্ত করেছি। ডিএমসিবি'র সাথে স¤পৃক্ত হওয়ার পর দীর্ঘ এ ব্যবসা জীবনে পুঁজির চিন্তা করতে হয়নি। তারা আমার প্রতি যে নমনীয়তা দেখিয়েছে, তার ভিত্তিতেই তিল তিল করে দাঁড়িয়েছে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বড় ধরণের পুঁজির প্রয়োজন হলে আগে থেকেই চিন্তা করে পূর্ব বিনিয়োগ পরিশোধে মনোযোগী হই এবং পরবর্তী বিনিয়োগ সুবিধা গ্রহণ করি। '

ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে মহিউদ্দীন আহমেদ জানান, দিনে দিনে স্যানিটারি পণ্যের চাহিদা বাড়তে থাকায় এ ব্যবসার বিস্তৃতি লাভজনক হবে। তাই ব্যবসার পরিসর বাড়ানোর চিন্তা আছে। ডিএমসিবি'র বিদ্যমান বিনিয়োগ পরিশোধের পর নতুন করে ব্যবসা বাড়ানোর উদ্যোগ নেবো। সে কাজেও ডিএমসিবি আমার পাশে থেকে অতীতের ন্যায় আমার সফল্যের অংশীদার হবে ইনশাআল্লাহ।